ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় দিনদুপুরে বনভূমি দখলে দু’পক্ষে ব্যাপক গোলাগুলি, বন্দুক উদ্ধার, আটক-৪

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলার বানিয়ারছাড়া এলাকায় বনভূমি জবরদখলের ঘটনায় দুই গ্রুপের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী গোলাগুলি ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে আটক করেছে। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে গোলাগুলিতে একপক্ষের ব্যবহৃত দেশে তৈরি একটি লম্বা বন্দুক। গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে বানিয়ারছড়া-ফাইতং সড়কের মহেশখালী পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আটককৃতরা হলেন লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের অংসা থোয়াইর ছেলে ধর্মান্তরিত ওমর ফারুক (৪৪)। তিনি ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। অন্য তিনজন হলেন চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়ার আবুল হোছনের ছেলে বাদশা মিয়া (৪৮), লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্যারচর গ্রামের ফজল করিমের ছেলে মোহাম্মদ মহসিন (২৬) ও চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গা গ্রামের শামশুল আলমের ছেলে আহত সাইফুল ইসলাম (৩৩)।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চকরিয়া উপজেলার বানিয়ারছড়া-ফাইতং সড়কের মহশেখালী পাড়া এলাকায় বনবিভাগের বিপুল পরিমাণ জায়গা দখলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মহড়া দিচ্ছেন বরইতলী ইউনিয়নের কলেজ ছাত্র মোরশেদ হত্যা মামলার আসামী বানিয়ারছড়াস্থ পাহাড়ি জনপদের আলোচিত ত্রাস শাহজাহান ও তাঁর লোকজন। তাদেরকে দখল চেষ্ঠার কাজে বাঁধা দিতে অপরপক্ষে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ও তার লোকজন।

সর্বশেষ গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে বনবিভাগের ওই জায়গা দখল নিতে গিয়ে দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ওইসময় দুইপক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে থেমে থেমে উভয়পক্ষে অন্তত ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। ঘটনার সময় উভয়পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হয়। তন্মধ্যে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

এদিকে দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনার পরপর ঘটনাস্থলে পৌঁেছন হারবাং ফাঁড়ির আইসি আবুল কালামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছা মাত্র পুলিশের সাথেও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয় দুইপক্ষের লোকজন। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে আটক করে। এ সময় উদ্ধার করা হয় গোলাগুলিতে একপক্ষের ব্যবহৃত দেশে তৈরি একটি লম্বা বন্দুক। তবে ওইসময় দখল চেষ্ঠায় নেতৃত্ব দেয়া শাহজাহান বাহিনীর প্রধান শাহজাহান ও তাঁর লোকজন পালিয়ে গেছে।

থেমে থেমে সংর্ঘষ চলাকালে দুপুর দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মতিউল ইসলাম, চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াছির আরাফাতসহ একদল পুলিশ।

চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াছির আরাফাত বলেন, বন্দুকসহ আটক ৪জনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছে। তবে তাঁর ব্যাপারে যাছাই বাছাই করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ফাঁড়ির পুলিশ অস্ত্রসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করলেও সংঘর্ষ হওয়া ঘটনাস্থল লামা উপজেলার ফাইতং এলাকা হওয়ায় আটককৃতদেরকে লামা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মামলাও হবে ওই থানায়।

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, বনবিভাগের জায়গা দখলে নেতৃত্ব দেয়া কলেজ ছাত্র মোরশেদ হত্যা মামলার আসামি শাহজাহান বানিয়ারছড়াস্থ পাহাড়ি জনপদের মুর্তিমান আতঙ্ক। বেশ কয়েকবছর ধরে শাহজাহান পুলিশের গ্রেফতার এড়িয়ে দাপটের সাথে বনবিভাগের জায়গা দখল-বিক্রি, গাছ কেটে লুটসহ নানা ধরণের অপরাধ কর্ম সংগঠিত করে আসছে। ##

পাঠকের মতামত: